বিশ্বব্যাপী অকাল মৃত্যুর বড়  একটি কারণ হলো হৃদরোগ এবং স্ট্রোক।  হৃৎপিন্ড আমাদের সম্পূর্ণ শরীরে রক্ত সঞ্চালনের কাজ সম্পাদন করে থাকে। সাধারণত যখন হৃদপিণ্ডের কোনও শিরায় রক্ত জমাট বাঁধে বা  হৃদপিণ্ডে পর্যাপ্ত রক্ত চলাচল কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়।তখন হৃদপিণ্ডে রক্ত প্রবাহে বাঁধার সৃষ্টি হয়, ফলে স্ট্রোক হয়।


বয়স, উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা,অ-স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ধুমপান ও মদ্যপান, উচ্চ কোলেস্টোরল, মানসিক প্রেসার,ডায়াবেটিস, রক্তস্বল্পতা, অধিক হারে চর্বি জাতীয় খাদ্য গ্রহন ও শাক সবজি ও আঁশ জাতীয় খাবার খাদ্যাভ্যাসে কম রাখা ইত্যাদি হলো মূলত হার্ট অ্যাটাকের প্রধান কারণ।

তাই নিজে সচেতনতা অবলম্বন পূর্বক আগে থেকেই এর লক্ষণগুলো ধরতে পারলে হয়তো অকাল মৃতু থেকে নিজেকে বাঁচানো সম্ভব হতে পারে। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের মতানুযায়ী, হার্ট অ্যাটাকের প্রায় ০১ মাস আগে থেকে ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস বিভিন্ন শারীরিক দূর্বলতা দেখা দেয়।

চলুন জেনে নেওয়া যাক হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণসমূহঃ

বুকে ব্যাথাঃ বুকে, পিঠে কাঁধে ব্যাথা হার্ট অ্যাটাকের একটি বড় লক্ষন। বুকে ব্যাথা সংকোচন হৃদপিণ্ড যে অসুস্থ এটির উপস্থিতি বর্ণনা করে আর বুকে ব্যাথা যদিও হার্ট অ্যাটাকের একটি কমন বা সাধারন লক্ষন, তাই সব ক্ষেত্রেই এরকমটা ঘটে না। চিকিৎসকরা একটি গবেষনায় লক্ষ্য করেছেন যে, প্রায় ১০% নারীরা হার্ট অ্যাটাকের আগে বা হার্ট অ্যাটাকের সময় নিজেদের বুকে ব্যাথা অনুভব করে।

 ঠান্ডা ঘাম: রক্ত প্রবাহ কমে যাওয়া, স্যাঁৎসেতে ঘাম ঠান্ডা ভাব অনুভূত হওয়া, ফলশ্রুতিতে ক্লান্তি অনুভব করা হার্ট অ্যাটাকের আরেকটি লক্ষন। তবে ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা ছাড়াও অতিরিক্ত ঘাম, বুক ধড়ফড় এবং শরীর খারাপ লাগতে শুরু করলে খুব দ্রুতই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।

শ্বাসকষ্ট বা নিঃশ্বাসে দুর্বলতাঃ শ্বাসকষ্ট তখনই হয় যখন ফুসফুসে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন রক্ত সরবরাহ কমে যায়। কেননা হার্টের সমস্যা হলে ফুসফুসে রক্ত সরবরাহ কমে যায়। ফলে শ্বাস ছোট হয়ে আসে এবং নিঃশ্বাসে কষ্ট হয়। হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত প্রায় সকল ব্যক্তিরাই শ্বাস নিতে কষ্টের অভিযোগ করেন।

বমি ভাব, তলপেটে ব্যথা বদহজমঃ বমি, বদহজম তলপেটে ব্যাথা হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম একটি পূর্বলক্ষন।  বেশিরভাগ গবেষণায় যেটা দেখা গিয়েছে, হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব থেকেই বেশিরভাগ হার্ট অ্যাটাকের রোগীরাই বদহজমের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল সমস্যা ভূগে থাকেন।

Hear Attack

 এছাড়াও বুক জ্বালাপোড়া করা যেটাকে আমরা স্বাভাবিক বদহজম ভেবে অবহেলা করে থাকি একটি কথা মনে রাখতে হবে কোনো কারণ ছাড়াই এসব হলে বিষয়গুলোকে অবহেলার চোখে দেখা যাবে না।

ঠান্ডা বা ফ্লুঃ গবেষনায় দেখা গিয়েছে যে, এসব রোগীদের মাস খানেক আগে ঠান্ডা বা ফ্লুতে আক্রান্ত হতে দেখা গিয়েছে।

ঘুমের সমস্যাঃ এসব রোগীদের ক্ষেত্রে ঘুমের সমস্যা হয় মূলত ঘুমের মধ্যে সৃষ্ট শ্বাসকষ্টের কারণে। ফলে শ্বাসরোধ হয় এবং হৃদপিন্ডের পেশীগুলোতে অধিকমাত্রায় প্রেসার সৃষ্টি হয়।

গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা মনে রাখবেন যে, উপরের লক্ষনগুলোই কিন্তু হার্ট অ্যাটাকের একমাত্র লক্ষন নয়। মানুষের বয়স রোগের মাত্রার উপর ভিত্তি করে লক্ষনগুলো ভিন্ন রকম হতে পারে। তবে গবেষণায় উপরের লক্ষনগুলোকে রোগের প্রধান লক্ষন হিসেবে ধরা হয়।

সুতরাং, এই লক্ষণগুলো দেখা গেলে দ্রুত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।